দেয়ালের কান না থাকলেও কান আছে আপনার ফোনের। আপনার সব সময়ের সঙ্গি মুঠোফোনে ওত পেতে আছে ভার্চুয়্যাল গোয়েন্দা। দেখতে পায় ক্যামেরার চোক দিয়ে সুনতে পায় কথা, Whatsapp এ পাঠানো ইমেজ , টেক্সট, ভয়েস মেসেজ হাতিয়ে নিতে পারে সব কিছুই হাতিয়ে নিতে পারে বিশেষ কোন গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা সৈরাচারি সরকার।


গোপন ভাবে নজরদারির কাজে যে যকল সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তাকে বলে স্পাইওয়্যায়ার, বর্তমানে হ্যাকিং সফটওয়্যার এর মধ্যে সব থেকে অত্যাধুনিক আবিস্কার হচ্ছে পেগাসাস। পেগাসাস এর মূল টার্গেট হন মূলত সরকারের বিপক্ষ দলের নেতা কর্মি, সাংবাদিক, শিল্পপতি, আইনজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। 


নজরদারির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল টেলি কমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার ব্যবহার করে থাকে ভেইক্যাল মাউন্টেড ডাটা ইন্টারসেপ্টর, মোবাইল ইন্টারসেপ্টর, পেগাসাস সফটওয়্যার এর মত যন্ত্র ও প্রযুক্তি ।


সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা চ্যুত হওয়া শেখ-হাসিনা সরকার এর পিছনে ব্যায় করেছে কোটি কোটি টাকা, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম দা-গার্ডিয়ানের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের পর বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে পেগাসাসের নাম। IOS কিংবা Android ইসরাইলের এন এস ও গ্রুপের তৈরি এই গুপ্তচর সফটওয়্যারের  মাধ্যমে হ্যাক করা যায় যে কোন ধরনের স্মার্টফোন। 


ব্যবহারকারি জানতেও পারেন না তিনি হারিয়েছেন ফোনের নিওন্ত্রন। একসময় ফিসিং লিংকের ক্লিক করলে হ্যাক হত ফোন কিন্তু পেগাসাস এর ক্ষেত্রে এসব কিছুই লাগেনা, নিরিহ কোন ম্যাসেজ বা whatsapp কলেও জিরো ক্লিক পদ্ধতিতেও ইন্সটল হয়ে যায় এই আরিপাতার যন্ত্র ।


পেগাসাস এর সব থেকে স্পেশাল ফিচার হচ্ছে এটি চুপিসরে যেমন ফোনে ইন্সটল হতে পারে তেমনি চুপিশরে নিজের উপস্থিতি মুছে দিতে পারে সয়ংক্রিয়ভাবে। দুরথেকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব সফটওয়্যারটি একবার ইন্সটল হলে ভয়েস কল, কন্ট্রাক্ট লিস্ট, ব্রাউজার হিস্ট্রি, টাইপ করা পাচওয়ার্ড ফোনের মাইক্রফোন, ক্যামেরা দখলে নিতে পারে।


এছাড়া এই সফটওয়্যার চালু করতে পারে ফোনের ক্যামেরা, জিপিএস এক কথায় লাইভ মনিটরিং গুপ্তচরের হাতের মুঠোই।


অনেক সময় এই সফটওয়্যারটি নিয়ে নিউ ফোনের রুট প্রিভিলেজ এবং জেল্ব্রেকের মতন সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন তখন ফোনের মালিকের চাইতেও ক্ষমতাবান হয়ে যায় জুড়ে বসা এই সফটওয়্যার,পেগাসাস এর আক্রমন থেকে বাচার পদ্ধতি এখনও আবিস্কার হয়নি। যত নিরাপদ ফোনি হোক স্পাইওয়্যার টির কাছে হার মানতে বাধ্য।


স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতাও বের করে ফেলতে পারে এই পেগাসাস,  প্রযুক্তিবিদরা বলছেন গুপ্তরভিত্তিক এই সফটওয়্যা এর আক্রমন রোধ করার জন্য সত্যিকার অর্থে সাধারন মানুষের কোন উপায় নেই।


সেক্ষেত্রে বলা যায় আপনার হাতে থাকা ফোন টি হয়তো আপনার অজান্তেই সরকারকে পাঠিয়ে দিচ্ছে সকল তথ্য, ২০২১ সালে আল-জিজারার একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে বলা হয় ইজরাইল থেকে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনে নজরদারি করার প্রযুক্তি আমদানি করেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনি।


ভারত, পাকিস্তান, সৌদি-আরব, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার বিরধি দলের উপর নজরদারি করার জন্য এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে।


রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গুলোই মূলত এই সফটওয়্যার এর ক্রেতা। বর্তমান তথ্য যুদ্ধের পৃথিবীতে ক্রমেই ক্ষমতাধর হয়ে উঠছে পেগাসাস এর মতন স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার

Post a Comment

أحدث أقدم